Wednesday, May 13, 2015

রসূল(সাঃ) জীবিত,নাকি মৃত ??

আল্লাহ তায়ালা বলেন প্রত্যেকটি প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করতে হবে। তিনি আরও বলেন-সব কিছুই নশ্বর, অবিনশ্বর কেবল আল্লাহর সত্ত্বা। হাদীস থেকে আমরা জেনেছি, শেষ পর্যন্ত মালাকুল মউত জীবিত থাকবে এবং তাকেও মৃত্যুবরণ করতে হবে। এটিই আল্লাহর অহংকার,যে তিনিই থাকবেন,তিনিই স্থায়ী,অবিনশ্বর,অনাদী,অনন্ত,অক্ষয়।

- তুমি (রাসুল) তো মরনশীল এবং তারাও (অন্য মানুষ) মরণশীল [সুরা যুমার - ৩০]

- ভুপৃষ্ঠে যা কিছু আছে সবই নশ্বর (মরণশীল) [সুরা আর রাহমান - ২৬]

- আমি তোমার পুর্বেও কোন মানুষকে অনন্ত জীবন দান করিনি (পরেও করিনি)। অর্থাৎ তোমার মৃত্যু হলে তারা কি চীরজীবি থাকবে? [সুরা আম্বিয়া- ৩৪]

সহিহ হাদীস থেকে আমরা জেনেছি মানুষ মারা গেলে বারযাখ নামক একটি স্থানে চলে যায়। এর দুটি অংশ আছে একটি ইল্লিয়িন,অপরটি সিজ্জিন। ইল্লিয়িন এমন স্থান যেখানে নেককার মানুষেরা থাকে। সহিহ হাদীসে এটাও বর্ণিত হয়েছে সে স্থানটির সাথে জান্নাতের সংযোগ স্থাপিত হবে,তারা সেখানে ঘুমিয়ে থাকবে। এবং যখন হাশরের দিনে তাদেরকে ডেকে দেওয়া হবে, তারা উঠে বলবে আমরা একদিন অথবা আরও কিছুটা বেশী সময় ধরে ঘুমিয়েছিলাম। অপরদিকে সিজ্জিনে পাপী বান্দাদের শাস্তি প্রদান করা হবে। হাশরে সকলেই উঠবে এবং বিচার হবে,এরপর জান্নাত ও জাহান্নাম নির্ধারিত হবে।

এ পর্যন্ত যা বললাম তার ব্যাপারে সকল তাওহিদপন্থী একমত হবেন। কিন্তু এর ভেতরদিয়েই ব্যাখ্যা বিশ্লেষনগত কিছু বিষয়ে আলিমদের মধ্যে মত দ্বৈততা রয়েছে,যা অস্বাভাবিক নয়। বিশেষ করে নবী ও শহীদদের কবর জীবনের ব্যাপারে এই মতদ্বৈততা সৃষ্টি হয়েছে। আমি এমন একটি অবস্থান থেকে বিষয়টি উপস্থাপন করতে চাই যেটা চিন্তাশীলদের চিন্তায় সহায়ক হতে পারে। আমার পক্ষ থেকে সকল ভুলের কারনে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

==============================

প্রশ্ন হল রসূল(সাঃ)কবরে জিবীত আছেন নাকি তিনি মৃত ?

যেহেতু রসূল(সাঃ) মানুষ ছিলেন আর ইতিহাস থেকে জানি তিনি মৃত্যুবরণ করেছিলেন ,তাই অবশ্যই তিনি মৃত । তবে যারা এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলছেন,তারা তার(সাঃ)মৃত্যুর পরবর্তী অবস্থার চিত্রটি নিয়ে মত দ্বৈততায় জড়িয়েছেন। তারা বলছেন সকল ভালো মানুষ ইল্লিয়িনে ঘুমন্ত অবস্থায় থাকে কিন্তু শহীদরা তেমনটি থাকেন না। তারা জেগে থাকেন এবং তারা নিয়ামত উপভোগ করেন। এ প্রসঙ্গে কুরআনের আয়াত ও হাদীসও পেশ করা হয়েছে। আর এখান থেকে এভাবে সিদ্ধান্তে আসা হয়েছে যে,যেহেতু শহীদরা জিবীত থাকেন তা প্রমানিত,তাই শহীদদের থেকেও অনেক বেশী সম্মানিত নবীগণ অবশ্যই জিবিত।

আসুন আমরা এ সংক্রান্ত বিষয়ে কিছু সূত্র জেনে নেই:

- এবং যারা হিজরত করেছে আল্লাহর পথে, অতপর নিহত হয়েছে অথবা মারা গেছে তাদেরকে আল্লাহ অবশ্যই উৎকৃস্ট জীবিকা দান করবেন। আর নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বোৎকৃস্ট রিজিকদাতা। [সুরা হজ্জ - ৫৮]

- যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে তাহাদেরকে কখনই মৃত মনে করো না, বরং তাহারা জীবিত এবং তাদের প্রতিপালকের নিকট হইতে তারা জীবিকা প্রাপ্ত। [সুরা ইমরান - ১৬৯]

এবং যারা হিজরত করেছে আল্লাহর পথে, অতপর নিহত হয়েছে অথবা মারা গেছে তাদেরকে আল্লাহ অবশ্যই উৎকৃস্ট জীবিকা দান করবেন। আর নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বোৎকৃস্ট রিজিকদাতা। তিনি (আল্লাহ) তাহাদেরকে অবশ্যই এমন স্থানে দাখিল করবেন যা তারা পছন্দ করবে এবং আল্লাহ সম্যক প্রজ্ঞাময়, পরম সহনশীল। (সুরা হজ্জ এর আয়াত ৫৮,৫৯ )

লক্ষ্য করুন, এখানে যদিও বলা আছে মৃত্যুর পরে জীবিকা দেওয়া হবে। কিন্তু সেই সাথে কিন্তু এটাও বলা আছে তাহাদেরকে "এমন এক স্থানে" দাখিল করবেন। অর্থাৎ আমাদের দেখা চেনা জানা ভুবন নয়, অন্য কোন ভুবন। (দুনিয়াতে নয়)

এখানে আল্লাহর পক্ষ থেকে শহীদদেরকে যে রিজিক প্রদানের কথা হচ্ছে তার অর্থ যদি এই হয় তারা ৫/৬ফুট লম্বা কবরে শুয়ে সেটা উপভোগ করছেন,তাহলে কবর খুড়ে দেখলে তা প্রমানিত হওয়ার কথা। এখানে মৃত্যুর পর যে জগতে আত্মা প্রবেশ করে,সেই অপরিচিত জগৎকেই কবর বলা হয়। সেটা ইল্লিয়িন অথবা সিজ্জিন। সেটা হল বারযাখ বা পর্দা,যার ওপাশে আছে হাশরের অবস্থা। যখন চূড়ান্ড সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

অতএব শহীদরা যদি মৃত্যুর পর রিজিক পেয়ে থাকেন, সেটা ইল্লিয়িনের অবস্থায়,যার সাথে জান্নাতের সংযোগ রয়েছে। আর নবীদের অবস্থার ব্যাপারে শহীদদের বিষয়ে অবতীর্ণ আয়াত ও বর্ণিত হাদীসটি তাদের ক্ষেত্রে গ্রহন করলেও বলতে হয়,যেখানে নবীদেরকে দাফন করা হয়েছে বা কবরস্ত করা হয়েছে সে স্থানটি আমাদের দৃষ্টিতে কবর হলেও ঘটনা সেখানে ঘটেনা। ঘটনা এমন একটি স্থানে ঘটে যেটি শুধু আল্লাহই জানেন। তবে মানুষকে আল্লাহ সৎ পথে পরিচালিত করার জন্যে কখনও নিদর্শন দেখান। তার জন্যে এই কবরসমূহে কিছু নিদর্শন প্রকাশিত হয় আমাদের বোঝার জন্যে। যেমন: কখনও কখনও কিছু শহীদদের দেহ দীর্ঘ সময় পরও অবিকৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। আবার কখনও কখনও কোনো কবর থেকে শাস্তির নিদর্শনও প্রত্যক্ষ করা গেছে। যেমন সহী বুখারীর বর্ণিত একটি হাদীসে এসেছে আল্লাহর রসূল(সাঃ) একটি কবরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ তার উটটি লাফ দিয়ে বসে পড়ে। তিনি তখন জানতে চান কার কবর,তাকে জানানো হয়। তিনি বলেন এই কবরবাসীর শাস্তি হচ্ছে একটি সাধারণ কারনে,তা হল সে প্রস্রাব থেকে পবিত্র হত না। এরপর তিনি একটি খেজুরের ডাল কবরে পুতে দিয়ে বলেন,যতদিন এটি না শুকাচ্ছে,তার কবরের শাস্তি লাঘব হবে আশা করা যায়....

এ হাদীস থেকে বোঝা যায়, শাস্তি দাফন করা এই কবরেই হয়। কিন্তু এটা যদি এভাবে সত্য হয়,তাহলে প্রত্যেক কবরের ক্ষেত্রে বিষয়টি বুঝতে পারার কথা,অথবা উটেরা বুঝতে পারবে। তবে আমি এটাও প্রমান করতে চাচ্ছি না যে, ঘটনা এই মাটির কবরে ঘটেনা। বরং আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাচ্ছি-কিছু বিষয়ে আমাদের স্পষ্টভাবে জানানো হয়নি,কারন সেটা জানানো প্রয়োজনও নেই,অথবা জানালেও আমরা সঠিকভাবে বুঝতে সক্ষম হবনা । আমরা কিছু বিষয়ে জানিনা,এটাই সত্য। শুধু শুধু জ্ঞান জাহির করতে অতিরিক্ত কচলাকচলি না করাই কল্যানকর।

হতে পারে সকল ঘটনা এই কবরেই ঘটে কিন্তু কি রূপে ঘটে সেটি আমাদের অজানা। পূনরুত্থান সম্পর্কিত হাদীস থেকে বোঝা যায়,মানুষ হাশরের মাঠে এসকল কবরস্থান থেকে উত্থিত হয়ে অগ্রসর হবে। এবং সহি হাদীস থেকে এটাও জানা যায়, হাশর হবে এই পৃথিবীতেই। এটাকে সমান ময়দানে পরিনত করা হবে।

“ওহুদের যুদ্ধে শহীদগণ অফুরন্ত নেয়ামত পাবার পর জান্নাতুল ফেরদাউস থেকে তারা বললেন........‘এরুপ কেউ কি আছে,যে দুনিয়াতে আমাদের ভাইদের কাছে সু-সংবাদ পৌঁছে দিবে,আমরা জান্নাতে কিভাবে জীবন যাপন করছি এবং এখানে আমাদেরকে কত উৎকৃষ্ট জীবিকা দান করা হয়েছে,যাতে মানুষেরা কখনই জিহাদে শিথিলতা প্রদর্শন না করে ? অতঃপর মহান আল্লাহ তায়ালা বললেন-‘আমি তাদের কাছে তোমাদের পক্ষ হতে এ সংবাদ পৌঁছে দেব।”(হাদীসে কুদ্সী)(রসূল সাঃ এর মাধ্যমে আল্লাহ আমাদেরকে তা জানিয়ে দিয়েছেন।)

মুসলিম শরীফে বর্ণিত একটি হাদীসে শহীদদের ব্যাপারে বলা হচ্ছে-তাদের রুহকে একটি সবুজ রঙের পাখির মধ্যে ফুকে দেওয়া হয় এবং তারা জান্নাতের সর্বত্র বিচরণ করতে পারে।

এখানে প্রশ্ন আসতে পারে, হাশরের আগেই কিভাবে শহীদরা জান্নাতে গেল ? আরও প্রশ্ন আসতে পারে চলমান পৃতিবীর মাত্র কয়েক সেকেন্ড সময়ের মধ্যে রসূল(সাঃ) মিরাজে গিয়ে এতসব কাজ কিভাবে করলেন ? এরকম আরও কিছু সময় সংক্রান্ত জটিল বিষয় রয়েছে,যা আমরা জ্ঞানের স্বল্পতার কারনে বুঝতে অক্ষম। মূলত: এসকল বিষয়ের জ্ঞান শুধু আল্লাহর রয়েছে। যে বিষয় বা স্থানসমূহ সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেন, তা কোনো মানুষ দেখেনি,কল্পনাও করেনি,সেসব বিষয় সম্পর্কে মানুষের কল্পনা,চিন্তা ভুল হওয়ার গ্যারান্টি আল্লাহই দিচ্ছেন। কারন সেটা মানুষের কল্পনার বাইরের বিষয়। আমরা এসকল বিষয় থেকে কোনো কিছু উপলব্ধী করতে পারি,কিন্তু এসব বিষয়ে বিতর্ক কোনো কল্যান বহন করেনা। শুধু বিশ্বাস করতে হবে।

আসুন আমরা আরও কিছু রেফারেন্স দেখী:

আবূ বকর (রাঃ) মদীনার উপকন্ঠের তাঁর বাড়ি থেকে মসজিদে নববীতে এসে উম্মুল মু’মিনীন আয়িশার (রাঃ) ঘরে রসূলুল্লাহকে (সঃ) দেখতে গেলেন। তিনি রসূলুল্লাহর কপালে চুমু খেয়ে বলেছিলেন, “আল্লাহর ক্বসম, আপনি দু’বার মৃত্যু বরণ করবেন না। আপনার জন্য আল্লাহ যে মৃত্যু নির্ধারিত করে রেখেছিলেন তার স্বাদ আপনি আস্বাদন করেছেন।”(বুখারী-কিতাবুল মাগাজী)

এরপর তিনি বেরিয়ে এসে আল্লাহর হামদ ও সানা দিয়ে বক্তৃতা শুরু করলে জনতা তাঁর পাশে এসে জমায়েত হয়। তিনি বললেন, “যে মুহাম্মদের ইবাদত করত তার জানা উচিৎ তিনি মরে গেছেন; আর যে আল্লাহর ইবাদত করে তার জানা উচিৎ আল্লাহ চিরঞ্জীব, তিনি মারা যান না।”(বুখারী-কিতাবুল মাগাজী)

এরপর তিনি পড়লেন, “মুহাম্মদ একজন রসূল ছাড়া আর কিছুই ছিলেন না। তাঁর আগেও অনেক রসূল গত হয়েছেন। এখন যদি তিনি মারা যান অথবা নিহত হন তাহলে কি তোমরা [তোমাদের দীন থেকে] পেছনে ফিরে যাবে? আর যে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে সে আল্লাহর কোন ক্ষতিই করতে পারবে না। আর আল্লাহ শোকরকারীদের পুরস্কৃত করবেন।”(আল-কুরআন, ৩:১৪৪)

রসূলুল্লাহ্‌ (সঃ) মারা গেছেন। তিনি মারা যেতে পারেন, যেমন তাঁর আগের রসূলরা মারা গেছেন। আল্লাহ তাঁর রসূলের মৃত্যুর নিশ্চয়তা দিয়ে আয়াত নাজ়িল করেছেন। “নিশ্চয় তোমারও মৃত্যু হবে এবং তাদেরও মৃত্যু হবে। তারপর কিয়ামতের দিনে নিশ্চয়ই তোমাদের প্রভুর সামনে তোমরা একে-অন্যে বিতর্কে লিপ্ত হবে।” (আল-কুরআন, ৩৯:৩০-৩২)

অর্থাৎ রসূল(সাঃ) এর ওফাত হয়েছে। তিনি আমাদের মাঝে কোনোভাবেই ,কোনো রূপেই উপস্থিত নেই।

=======================

এবার আমরা আরও কিছু রেফারেন্স দেখব:

“আল্লাহর পথে যারা নিহত (শহীদ) হয়, তোমরা তাদেরকে মৃত বলো না। বরং তারা জীবিত। তবে তা তোমরা উপলব্ধি করতে পারো না।”

(সূরাহ বাকারা, আয়াত নং ১৫৪)

“যারা আল্লাহর পথে নিহত (শহীদ) হয়েছে, তোমরা তাদেরকে মৃত জ্ঞান করো না। বরং তারা জীবিত; তাদের রব-প্রতিপালকের নিকট থেকে তারা রিযিকপ্রাপ্ত হয়।”

(সূরাহ আলে ইমরান, আয়াত নং ১৬৯)

শহীদগণ আলমে বরযাখে কিভাবে জীবিত অবস্হায় জীবন অতিবাহিত করেন এবং রিযিক লাভ করেন, সে সম্পর্কে হাদীস শরীফে রয়েছে--

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন--

“শহীদগণের রূহ সবুজ রঙের পাখির পেটের ভিতরে বিশেষ সম্মানিত অবয়বে অনন্য জীবন লাভ করে। আর তাদের জন্য আরশে প্রদীপসমূহ লটকানো হয়। তারা জান্নাতে যেখানে খুশী বিচরণ করেন।”

(সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৮৮৭)

শহীদগণ আলমে বরযাখে রিযিক কীভাবে লাভ করেন-এ সম্পর্কে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন--

“শহীদগণ জান্নাতের দ্বারে নির্ঝরণীর ঝলকে সবুজ গম্বুজের মধ্যে অবস্হান করেন। তখন জান্নাত থেকে সকাল ও সন্ধ্যায় তাদের নিকট রিযিক আগমন করে।”

(মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ২৩৮৬)

অপরদিকে সাধারণ মুমিনগণের রূহ সম্পর্কে হযরত কা‘ব ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন--

“মুমিনের রূহ পাখিরূপে জান্নাতের গাছে বিচরণ করে--যে পর্যন্ত কিয়ামতে তার দেহে তাকে ফেরানো না হয়।”

(মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ১৫৩৫১)

সুতরাং এক্ষেত্রে শহীদগণের রূহ তারকার ন্যায়-যা সবুজ পাখির ভিতর প্রবেশ করে। পক্ষান্তরে সাধারণ মুমিনগণের রূহ স্বয়ং পাখির স্বরূপ হয়ে যায়।

(তাফসীরে ইবনে কাসীর, ২য় খণ্ড, ১৬৪ পৃষ্ঠা)

=============================

নবীগণের কবরে জীবিত থাকা প্রসঙ্গে সহীহ বুখারীর ব্যাখ্যাগ্রন্হ ফাতহুল বারীতে আল্লামা ইবনে হাজর আসক্বালানী (রহ.) তার অভিমত ব্যক্ত করেন-

“নবীগণ মহান আল্লাহর নিকট জীবিত, যদিও তারা দুনিয়াবাসীদের দিক দিয়ে মৃতের রূপে আছেন, কার-, প্রমাণিত আছে যে, শহীদগণ আল্লাহর নিকট জীবিত; আর নবীগণ নিঃসন্দেহে শহীদগণের চেয়ে অধিক মর্যাদাবান।”

(ফাতহুল বারী, ৬ষ্ঠ খণ্ড, ৪৪৪ পৃষ্ঠা)

হযরত আনাস (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন--

“নিশ্চয়ই নবীগণ কবরে জীবিত; তারা নামায পড়েন।”

(বাইহাক্বী-হায়াতুল আম্বিয়া, ১৫ খণ্ড, ১৪৮ পৃষ্ঠা/ মুসনাদে বাযযার, হাদীস নং ৬৩৯১/ মুসনাদে আবী ইয়া‘লা, হাদীস নং ৩৪২৫ প্রভৃতি)

রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন--

“ যে রাতে আমাকে মি’রাজে নেয়া হলো; মূসা (আ.)-এর নিকট এলাম এমতাবস্হায় যে, তিনি লাল বালুকাস্তুপের নিকট স্বীয় কবরে দাঁড়িয়ে নামায পড়ছিলেন।”

(সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৯৮১/ মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ১২৫০৪/ সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং ১৬৩১)

এ হাদীস উল্লেখ করার পর আল্লামা কুরতুবী (রহ.) অভিমত ব্যক্ত করেন--

“এ হাদীসের দ্বারা বাহ্যতভাবে প্রমাণিত হয় যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) হযরত মূসা (আ.)কে বাস্তবেই জাগ্রত অবস্হায়ই দেখেছেন এবং মূসা (আ.) কবরে জীবিত ছিলেন, তিনি সেখানে সেই নামাযই পড়ছিলেন-যা তিনি জীবদ্দশায় পড়তেন। এ সবই সম্ভব, এর কোন কিছুতে অবাস্তবতা নেই। আর বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, শহীদগণ জীবিত এবং তারা রিযিকপ্রাপ্ত হন, আর তাদের অনেককে এমন অবস্হায় পাওয়া গিয়েছে যে, অনেক বছর অতিক্রান্ত হলেও স্বীয় কবরের মধ্যে তাঁরা কোনরূপ পরিবর্তন হননি। তারা সম্পূর্ণ অবিকৃতরূপে আছেন। সুতরাং যখন শহীদগণের অবস্হা এই, তখনতো নবীগণের অবস্হা আরো উন্নত ও উত্তম হবে!” (আল-মুফহিম, ৬ষ্ঠ খণ্ড, ১৯২ পৃষ্ঠা)

তেমনি রাসূলুল্লাহ (সা.) হযরত ঈসা (আ.) ও হযরত ইবরাহীম (আ.)কে এ অবস্হায় দেখেছেন যে, তারা নামায পড়ছেন বলে অপর রিওয়ায়াতে রয়েছে। (দ্রষ্টব্য : সহীহ মুসলিম, ২য় খণ্ড, ২৬৮ পৃষ্ঠা)

উল্লিখিত হাদীসসমূহে নবীগণের ওফাতের পর কবরে যে নামায পড়ার কথা বর্ণিত হয়েছে, এটা দুনিয়াতে তাঁদের প্রতি আরোপিত তাকলীফী নামায নয়, বরং এটা কবরে তাঁদের বিশেষ মর্যাদার পরিচায়ক তাশরীফী নামায। তাঁরা কবরে সশরীরে জীবিত হওয়ার পর এ নামাযের মাধ্যমে মহান আল্লাহর গুণকীর্তন করেন-যেমন ফেরেশতাগণ মুকাল্লাফ না হওয়া সত্ত্বেও মহান আল্লাহর বিভিন্ন ইবাদত পালনের দ্বারা তাঁর গুণকীর্তন করেন। নবীগণ কবরে গমনের পর কখন এ তাশরীফী নামায আদায়ের সম্মান লাভ করেন, সে সম্পর্কে হযরত আনাস (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন--

“নবীগণ তাঁদের কবরে চল্লিশদিন অতিবাহিত হওয়ার পর নিবৃত্ত থাকেন না এ ছাড়া যে, তারা মহান আল্লাহর সমীপে নামায পড়তে থাকেন। আর তা অব্যাহত থাকবে যাবত (কিয়ামতের জন্য) শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হয়।”

(মুসনাদে আবু ইয়া‘লা, হাদীস নং ৩৪২৮/ মুসনাদে বায্‌যার, হাদীস নং ৬৩৯৬/ মাজমাউয যাওয়ায়িদ, ৪র্থ খণ্ড, ২১১ পৃষ্ঠা)

অপরদিকে আলমে বরযাখে শহীদগণকে রিযিক প্রদান করা হয় মর্মে যেমন পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে, তেমনি আলমে বরযাখে নবীগণকে রিযিক প্রদান করা হয় মর্মে হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে। অধিকন্তু তাঁদের শরীর কবরে অক্ষত থাকে বলে হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে। এসবই কবরে(আলমে বারযাখে) তাঁদের সশরীরে জীবিত থাকার প্রমাণ বহন করে। এ প্রসঙ্গে হযরত আবু দারদা (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন--

“আল্লাহ তা‘আলা যমিনের উপর হারাম করে দিয়েছেন যে, নবীগণের শরীর খাবে। তাই আল্লাহর নবী মাত্রই জীবিত এবং রিযিকপ্রাপ্ত হন।”

(সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ১৬৩৭)

এ সকল হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হলো--নবী ও রাসূলগণ কবরে(আলমে বারযাখে) সশরীরে জীবিত আছেন; তারা রিযিকপ্রাপ্ত হন এবং নামায পড়েন(এই নামায পৃথিবীবাসীর মত এমন দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে আদায়কৃত নামায নয়)।

এ ছাড়াও মি‘রাজের ঘটনার হাদীস শরীফে অনেক নবীর কথা এসেছে যে, তাঁদের সাথে আসমানে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর দেখা-সাক্ষাত ও সালাম-কালাম হয়েছে এবং মূসা (আ.) উম্মতে মুহাম্মদীর উপর আরোপিত ৫০ ওয়াক্ত নামায কমিয়ে আনতে রাসূলুল্লাহ (সা.)কে পর্যায়ক্রমে কয়েকবার পরামর্শ দেন। যার বদৌলতে পরিশেষে ৪৫ ওয়াক্ত কমিয়ে ৫ ওয়াক্ত নামায ফরজরূপে বলবৎ করা হয়। আবার সকল নবী ও রাসূল (আ.) বাইতুল মুকাদ্দাসে তাশরীফ এনে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ইমামতীতে নামায আদায় করেন।

(দ্রষ্টব্য : সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৬১৪)

এসব ঘটনা নবীগণের (আ.) সশরীরে জীবিত থাকাকে অকাট্যভাবে প্রমাণ করে। সুতরাং সকল মুসলমানের এ আকীদা-বিশ্বাস রাখা কর্তব্য।

তবে নবীগণ কবরে সশরীরে জীবিত-এটা যেমন অকাট্যভাবে প্রমাণিত, তেমনি দুনিয়া থেকে তাঁরা ওফাত পেয়েছেন-একথাও সত্য এবং এর ওপরও ঈমান রাখতে হবে। যেমন, মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন--

“মুহাম্মদ (সাা.)তো একজন রাসূলই, আর তার পূর্বে বহু রাসূল অতিবাহিত হয়ে গেছেন।”

(সূরাহ আলে ইমরান, আয়াত নং ১৪৪)

অপর আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন--

“(হে নবী!) নিশ্চয়ই আপনারও মৃত্যু হবে এবং তাদেরও মৃত্যু হবে।”

(সূরাহ যুমার, আয়াত নং ৩০)

সুতরাং একদিকে যেমনিভাবে নবীগণের ইন্তিকাল বা ওফাতের ওপর ঈমান রাখা অপরিহার্য, তেমনি এর সাথে সাথে এ ঈমান পোষণ করাও কর্তব্য যে, নবীগণ বরযাখী জগতে বা কবরে সশরীরে জীবিত আছেন এবং তাঁরা তাঁদের সেই বারযাখী জীবনে জীবিত মানুষের ন্যায় বিশেষ বৈশিষ্ট্য লাভ করছেন-যা অপর সাধারণ মৃত ব্যক্তির নেই।

==========================

হযরত আবুদ দারদা’ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন--“তোমরা জুমু‘আর দিনে বেশী করে দরূদ পড়ো, কেননা এদিন উপস্থিতির দিন।ফেরেশতাগণ এদিনে উপস্থিত হন, আর তোমাদের কেউ যখনই আমার প্রতি দরূদ পড়ে, তখনই সেই দরূদ আমার নিকট পেশ করা হয়-এ পর্যন্ত যে, সে দরূদ পড়া থেকে ফারেগ হয়।” হযরত আবুদ দারদা’ (রা.) বলেন, আমি বললাম--(আপনার) ওফাতের পরও তা হবে? রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন-“(আমার) ওফাতের পরও তা হবে ,কারণ আল্লাহ তা‘আলা যমিনের ওপর হারাম করেছেন যে, নবীগণের শরীর ভক্ষণ করবে। কাজেই নবীগণ জীবিত এবং রিযিকপ্রাপ্ত হন।”

(সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ১০৮৫)

অনুরূপভাবে সুনানে আবু দাউদ, সুনানে নাসায়ী প্রভৃতিতে অপর রিওয়ায়াতে বিষয়টিকে আরো স্পষ্ট করে বর্ণনা করা হয়েছে--

হযরত আউস ইবনে আউস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন--“নিশ্চয়ই তোমাদের দিনসমূহের মধ্যে সর্বোত্তম দিন হচ্ছে জুমু‘আর দিন। এদিনে হযরত আদম (আ.)কে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং এদিনে সিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে আর এদিনে সবাই সেই আওয়াজে বেহুঁশ হয়ে যাবে, সুতরাং এদিনে তোমরা আমার প্রতি বেশী করে দরূদ শরীফ পড়ো। কেননা, তোমাদের দরূদ আমার নিকট পৌঁছানো হবে। এ সময় জনৈক ব্যক্তি প্রশ্ন করলেন--ইয়া রাসূলুল্লাহ! (আপনার ওফাতের পর) যখন আপনি মাটিতে গলে যাবেন, সে অবস্থায় আপনার নিকট কিভাবে আমাদের দরূদ পৌঁছানো হবে? তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করলেন-

-“নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা যমিনের ওপর হারাম করেছেন যে, নবীগণের শরীর ভক্ষণ করবে।” (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ১০৪৮/ সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং ১৩৭৩/ ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ১০৮৫ প্রভৃতি)

অপর হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) উম্মতের সালামের জাওয়াবও সঙ্গে সঙ্গে প্রদান করেন বলে বর্ণনা করা হয়েছে। এ সম্পর্কে হযরত আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন--

“যে কেউ আমার প্রতি সালাম প্রেরণ করবে, আল্লাহ তা‘আলা আমার রূহ ফিরিয়ে দিবেন, তখন আমি তার সালামের উত্তর প্রদান করবো।”

(সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ২০৪১/ বাইহাকী-সুনানে কুবরা, হাদীস নং ১০২৭০)

এক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট তাঁর রওজা মুবারকে দরূদ ও সালাম কী উপায়ে পৌঁছবে-এ সম্পর্কে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন--

“নিশ্চয় আল্লাহর অনেক বিচরণকারী ফেরেশতা রয়েছেন-যারা আমার নিকট আমার উম্মতের সালাম পৌঁছে দেন।”

(সুনানে নাসায়ী, ২য় খণ্ড, ২৪১ পৃষ্ঠা/ সহীহ ইবনে হাব্বান, হাদীস নং ৯১৪/ মুসতাদরাকে হাকিম, হাদীস নং ৪২১২)

যরত আলী (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন--

“আমার প্রতি দরূদ পড়ো। কেননা, তোমাদের দরূদ আমার নিকট পৌঁছে, তোমরা যেখানেই থাকো।”

(মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবাহ, ২য় খণ্ড, ৩৭৫ পৃষ্ঠা/ মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ৮৫৮৬ / তাবরানী কাবীর, হাদীস নং ২৮২৯)

এ হাদীসসমূহ দ্বারা বুঝা গেলো--রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ওফাতের পরও তাঁর কবর মুবারকে তাঁর নিকট উম্মতের দুরূদ পৌঁছানো হয় এবং সেই দুরূদ তার কাছে আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাদের মাধ্যমে প্রেরণ করেন এবং তিনি উম্মতের সালামের জাওয়াবও প্রদান করেন। সেই সাথে এটাও জানা গেলো যে, তিনি কবরে অর্থাৎ আলমে বারযাখে জীবিত। তেমনিভাবে সকল নবীই করবে জীবিত আছেন এবং রিযিকপ্রাপ্ত হচ্ছেন।

=============================

***************************************

খেয়াল করুন :

=========

যে সকল আলিমগণ কবরে বা আলমে বারযাখে রসূল(সাঃ)এর জীবিত থাকার কথা বলছেন, এবং কবরের জীবনে বা আলমে বারযাখের জীবনে মৃত বা ঘুমন্ত অবস্থায় থাকার কথা বলছেন,আমি তাদের উভয়ের বক্তব্য এং তথ্য প্রমান পড়েছি। উভয়েই রসূল(সাঃ)এর ওফাত বিশ্বাস করেন। কিন্তু আলমে বারযাখে তার(সাঃ) অবস্থানটি নিয়েই মূলত এই মতদ্বৈততা।

এসকল আলিমগণ বলেননি যে রসূল(সাঃ) আলমে বারযাখ থেকে কারো কল্যান বা অকল্যান করতে পারেন বা সে ক্ষমতা তার আছে। এটা বিশ্বাস করলে সে শিরক করল। এক শ্রেণীর বিদয়াতী ও মাজার পূজারীরা রসূল(সাঃ)কে হাজির নাজির মনে করেন । কিন্তু এসকল আলিমগন সেটা থেকে মুক্ত। এটি হল হক বা তাহীদপন্থী আলিমদের মধ্যে দালিলিক মতদ্বৈততা,যা একান্তই ব্যাখ্যাগত। উভয়ের কাছেই কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক তথ্য প্রমান মজুদ রয়েছে।

উম্মাহর একত্রিত থাকার স্বার্থে কিছু বিষয়ে বিতর্ক এড়িয়ে চলাই উত্তম। যেসকল বিষয়ের প্রকৃত জ্ঞান মানুষের নেই, সেসব বিষয়ে বিতর্কে কল্যান নেই। তবে এই বিতর্ক থেকে জ্ঞানীরা উপকৃত হবে, তাদের সামনে বেশী বেশী কুরআন সুন্নাহর সূত্র প্রদর্শিত হবে এবং জ্ঞানীরা তার জ্ঞানের সর্বোচ্চ ব্যবহার করে একাধিক বৈধ বিষয়ের ভেতর থেকে একটিকে সচেতনভাবে গ্রহন করতে সক্ষম হবে।

আমি এই লেখার মাধ্যমে বিতর্কের অবসান চেয়েছি,একইভাবে সত্য উপস্থাপন করতে চেয়েছি নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে। মূল বিষয় হল : রসূল(সাঃ) আল্লাহর একজন দাস কিন্তু রসূল হিসেবে বিশেষভাবে মনোনিত,সম্মানিত। আল্লাহ তাকে সম্মান প্রদান করেছেন বলেই তিনি সম্মানানিত হয়েছেন। তার কোনো ক্ষমতা নেই। সকল ক্ষমতার একচ্ছত্র অধিপতি হলেন আল্লাহ। তিনি বারযাখের জীবনে যদি আল্লাহর দয়ায় ঘুমন্ত অবস্থায় বিশেষ নিয়ামত প্রাপ্ত হয়ে থাকেন, তাহলে যেমন আমাদের কোনো কল্যান করতে সক্ষম নন, ঠিক তেমনিভাবে সেখানে তিনি জীবিত থাকলেও আমাদের কোনো কল্যান করতে সক্ষম নন। এই বিষয়টি কুরআন সুন্নাহর দলিল অনুযায়ী মেনে নিলে বা মেনে না নিলে ঈমান চলে যাবার মত ঘটনা ঘটবে বলে মনে হয়নি। শুধুমাত্র হাশরের দিনে আল্লাহর বিশেষ অনুমতিতে তিনি(সাঃ) উম্মতের জন্যে সুপারিশ করতে পারবেন। এটিও ক্ষমতা নয়, বরং আল্লাহর দয়া বা সম্মান। এ বিষয়টি চিন্তায় রেখে যদি কেউ আলমে বারযাখে তার(সাঃ) জীবিত হওয়া অথবা ঘুমন্ত অবস্থায় থাকার ব্যাপারে কুরআন,সুন্নাহর দলিল অনুযায়ী যে কোনো একটিকে গ্রহন করে,তাহলে আল্লাহ এটিকে অনুমোদন করবেন বলেই আমার উপলব্ধী হয়েছে। কিন্তু যদি উম্মাহর ঐক্যের বিষয়টি বিবেচনায় না এনে এসকল বিষয়ে ঢালাও মন্তব্য ,বিতর্ক করা শুরু করে,তবে তাতে কোনো কল্যান আছে বলে আমার মনে হয় না, বরং সীমা লঙ্ঘনের মত পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।

আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন ! সঠিক জ্ঞান দান করুন এবং সর্বদা কল্যানের পথে পরিচালিত করুন !! 

Source: http://www.monitorbd.net/blog/blogdetail/detail/4370/theslave/65028#.VVMURaPLes4

2 comments:

  1. জাযাকাল্লাহ খাইরান। অত্যন্ত তথ্যসমৃদ্ধ লেখা।

    ReplyDelete
  2. যাদের কচলানির অভ্যাস আছে, তারা এরপরও শুধু কচলাতেই থাকবে। আল্লাহ (সুব.)আমাদের সকলকে ক্ষমা করে দিন। আমীন।

    ReplyDelete